বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচন ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালসহ বিএনপিপন্থী ক্রীড়া সংগঠকদের অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন ঘণ্টা কয়েক আগে। এতে নির্বাচনের উত্তাপ-আমেজ অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে।
নির্বাচনের শুরু থেকে দুই সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মধ্যে সভাপতি প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা ছিল চরমে। নির্বাচনের নানা অঙ্ক-সমীকরণ এবং পারিপার্শ্বিকতায় তামিম পিছিয়ে পড়ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজেকে পরিচালক নির্বাচন থেকেই সরিয়ে নিলেন তামিম।
তামিম সরে যাওয়ায় এখন আপাতদৃষ্টিতে সাবেক জাতীয় অধিনায়ক ও বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতি হওয়া অনেকটাই সময়ের ব্যাপার। তবে বিসিবির এই নির্বাচনের রং যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে আরও নাটকীয় কিছু হলেও অবাক হওয়ার নেই। ২৩ জন পরিচালক নির্বাচিত ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দুই জন পরিচালক মনোনীত হওয়ার পর সভাপতি নির্বাচন হবে। সেখানে বুলবুল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হবেন নাকি পদচ্যুত সভাপতি ফারুক আহমেদও প্রার্থী হবেন এমন মৃদু গুঞ্জন ছড়াচ্ছে ক্রিকেটাঙ্গনে। বিসিবি নির্বাচনে এবার প্রতি মুহূর্তে যে বাকবদল হচ্ছে, ফলে কোনো গুঞ্জনই অগ্রাহ্য করার মতো নয়।
তামিমের সঙ্গে আরও যারা বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন
বিসিবি নির্বাচনে শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন তামিম ও বুলবুল। কাউন্সিলর নাম জমা দেওয়ার দিন দৃশ্যপটে আসেন ফারুক আহমেদ। ক্লাব ক্যাটাগরিতে ফারুক আহমেদ পরিচালক প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই মূলত নতুন অঙ্ক শুরু হচ্ছে। তামিম ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বাবু, ফাহিম সিনহা সরে যাওয়ায় ক্লাব ক্যাটাগরির কর্তৃত্ব এখন অলিখিতভাবে ফারুক আহমেদের হাতেই থাকছে। ২৫ জন পরিচালকের মধ্যে ১২ জনই ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে।
এই নির্বাচনের বড় রহস্যময় চরিত্র ফারুক আহমেদ। কয়েক মাস আগে তাকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পরিচালক হিসেবে অপসারণ করে। ফারুক আহমেদ এই অপসারণ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে দ্বারস্থ হয়েছিলেন আদালতের। তার বিসিবি থেকে প্রস্থানের পর গণমাধ্যমে বিসিবির কয়েকজন পরিচালক এবং উপদেষ্টারও সমালোচনা করেছিলেন। কয়েক মাস ঘুরতেই আবারও তিনি বিসিবির পরিচালক হতে আগ্রহী, যা খানিকটা রহস্যেরই।
ক্যাটাগরি-২ (ঢাকার ক্লাব) থেকে সর্বোচ্চ ৩২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে মনোনয়ন জমা দেন ৩০ জন। গতকাল আদালতে বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের ১৫ ক্লাবের ওপর করা রিটে আরও দুইজন নির্বাচন থেকে ছিটকে যান। বাকি ২৮ জনের মধ্যে আজ তামিম ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বাবু, সাব্বির আহমেদ রুবেল, ফাহিম সিনহাসহ আরও ১০ জন সরে দাঁড়ানোয় ১৮ জনের মতো রয়েছেন এই ক্যাটাগরিতে। ১২ পরিচালকের বিপরীতে অতিরিক্ত প্রার্থী থাকায় ভোটাভুটি হলেও আদতে সেটা আনুষ্ঠানিকতাই। ফারুক আহমেদ, মেজর ইমরোজ আহমেদ (অব.), আমজাদ হোসেন, ইসতিয়াক সাদেক, শানিয়ান তানিমসহ কারা নির্বাচিত হতে পারেন এটা ক্রিকেটাঙ্গনের প্রায় সবারই অনুমেয়।
বিসিবির নির্বাচনে সর্বশেষ বাক বদল হয়েছে গতকালের আদালতের রিটে। বিএনপিপন্থী সংগঠকদের অনেকেই নির্বাচন থেকে সরে গেলেও আইনি পথে হাঁটার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফারুক আহমেদের কাউন্সিলর ফরম নির্ধারিত সময়ের পর জমা নেওয়াসহ কিছু ইস্যুতে আইনি লড়াই করার ভিত্তি আছে তাদের হাতেও।
কয়েক মাস আগে সভাপতির দায়িত্ব হারানো ফারুক আহমেদ আবারও আলোচনার কেন্দ্রে
জেলা-বিভাগীয় ক্যাটাগরিতে সেই অর্থে নির্বাচনী উত্তাপ নেই। ১০ জনের মধ্যে বরিশাল, খুলনা ও সিলেট থেকে ইতোমধ্যে চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। ঢাকা বিভাগে নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দাঁড়িয়েছেন জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান। এই বিভাগে ফাহিম ও বুলবুলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে আহসান ইকবাল চৌধুরি ও আসিফ আকবর। কারণ এই বিভাগে প্রার্থী ছিলেন চারজন। এর মধ্যে চাঁদপুর থেকে শওকতের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আজ অপর প্রার্থী মীর হেলাল প্রত্যাহার করায় দুই পদের বেশি প্রার্থিতা নেই। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ভোটাভুটি হবে।
ক্যাটাগরি-৩ থেকেও নির্বাচনী উত্তাপ কমেছে। সাবেক বিসিবি পরিচালক সিরাজউদ্দিন আলমগীর আজ তামিমদের সঙ্গেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। ফলে এই ক্যাটাগরির একমাত্র পরিচালক পদে লড়াই সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ও দেবব্রত পালের মধ্যে। গঠনতান্ত্রিক কারণেই এই ক্যাটাগরির লড়াই খানিকটা অসময়েই। কারণ বিসিবি থেকে দশ জন জাতীয় ক্রিকেটার ও বিসিবি সভাপতি ৫ জন সাবেক অধিনায়ক মনোনীত করেন। ৪৫ ভোটের মধ্যে ১৫ ভোটই বিসিবি’র বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদের নিজস্ব।
S