Connect with us

বগুড়া

বাবার লাশ আটকিয়ে সম্পত্তির হিস্যা চাইলো সন্তান

Digital Darpan

Published

on

রাতভর উঠানে পড়ে ছিল কাফনে মোড়ানো এক লাশ। বাড়ির পুরো উঠানজুড়ে নিস্তব্ধতা—শুধু কান্নার শব্দ, মাঝে মাঝে ফিসফাস, আর একটাই প্রশ্ন: “কেন দাফন হচ্ছে না?”

লাশটি পান ব্যবসায়ী হামেদ আলীর (৫৮)। তিনি বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ শালুকগাড়ী গ্রামের মানুষ। রাজশাহী থেকে পান এনে উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারি বিক্রি করতেন। কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে হয়তো তিনি বুঝেছিলেন—তার প্রস্থান, ঘরে শান্তি বয়ে আনবে না। কারণ, মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তিনি তার সম্পত্তি—বসতবাড়ি, জমি স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে লিখে দেন। একমাত্র ছেলে মাসুদ রানা (৩০) বঞ্চিত হয় পৈতৃক সম্পত্তি থেকে।

গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হামেদ আলী। রাতেই জানাজার প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু হঠাৎই বাড়ির পরিবেশ পাল্টে যায়। ছেলেকে দেখা যায় কাফন করা লাশের পাশে বসে কান্না করছে, আর বলছে— বাবার মরদেহ দাফন নয়, আগে ন্যায্য সম্পত্তির হিস্যা চাই। আমার বাবার লাশ আমি দাফন করব না, যতক্ষণ না আমার ন্যায্য সম্পত্তি ফেরত দিচ্ছে! বাবা জীবিত থাকতে অন্যায় করেছেন, মৃত্যুর পর অন্তত আমি আমার অধিকার চাই।

এরপর থেকে লাশটি পড়ে থাকে বাড়ির উঠানে। রাত কেটে সকাল হয়, সুবহে সাদেক পেরিয়ে বেলা বাড়তে থাকে , গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে যায়। কাফন করা লাশ পাশে রেখে চলে তর্ক-বিতর্ক, পরামর্শ আর কান্না।

বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। শুরু হয় আলোচনা। লাশ আগে দাফন করি— এমন আহ্বান বারবার এলেও, ছেলে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত ইসলামি ফারায়েজ অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দুপুরে দলিল সম্পাদন করা হয় নতুন করে, যেখানে ছেলেকেও অংশ দেওয়া হয়।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল চারটার দিকে দাফন সম্পন্ন হয় হামেদ আলীর মরদেহ। দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা পর উঠানটি ফাঁকা হয়, কিন্তু বাতাসে রয়ে যায় ভারী নীরবতা।

এই ঘটনার পর পুরো শাজাহানপুরে চলছে আলোচনা। কেউ বলছেন, ছেলে অন্যায় করেনি, সে তার অধিকার চেয়েছে। আবার কেউ বলছেন, মৃত বাবার মরদেহ আটকে রেখে অধিকার আদায়—এ যেন মানবতার সবচেয়ে বড় পরাজয়।
গ্রামের এক বৃদ্ধ মৃদু গলায় বললেন, আমরা এমন ঘটনা জীবনে দেখিনি। মরার পরও মানুষ শান্তি পেল না। এটা সমাজের জন্য লজ্জার। এই সমাজে এখন সম্পত্তির কাগজের দাম মানুষের মর্যাদার চেয়ে বেশি।

রবিবার বিকেলে হামেদ আলীর জানাজা শেষে গ্রামজুড়ে নেমে আসে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। যে উঠানে সকাল পর্যন্ত কাফন ঢাকা লাশ পড়ে ছিল, সেখানে এখন শুধু নিঃশব্দে পতিত পাতা আর বাতাসের শব্দ। মানুষ চলে গেছে, লাশ মাটির নিচে। কিন্তু রয়ে গেছে এক প্রশ্ন সম্পত্তির লোভে আমরা কি ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি আমাদের হৃদয়ের মানবতা?

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বগুড়া

সুঘাটে ঊষার বার্ষিক বৃত্তি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন

Published

on

বগুড়া জেলার শেরপুর ও ধুনট উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার (১৪ নভেম্বর ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ফর ওয়েলফেয়ার – ঊষা (USAW) আয়োজিত বার্ষিক বৃত্তি পরীক্ষা-২০২৫ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার আয়োজক কমিটি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রায় ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দিনব্যাপী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পুরো পরীক্ষাজুড়ে নকলমুক্ত পরিবেশ, ডিজিটাল অ্যাডমিট, সঠিক সিট ব্যবস্থাপনা এবং প্রশ্নপত্র–উত্তরপত্রের নিরাপদ হ্যান্ডলিং নিশ্চিত করা হয়।

এ বছর প্রথমবারের মতো পাঁচটি কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কেন্দ্রগুলো হলো—জয়লা-জুয়ান ডিগ্রি কলেজ; কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কল্যাণী উচ্চ বিদ্যালয়; ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফুলজোড় উচ্চ বিদ্যালয়; সূত্রাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও সূত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; এবং ক্ষিদির হাসড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক)। সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন মো. আল আমিন হোসেন, মো. সবুজ হোসেন, মো. মোহাব্বত খান এবং মো. সুমন বিশ্বাস।

পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র সংগ্রহ করে নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মূল্যায়ন শেষ হলে ফলাফল প্রকাশের তারিখ জানানো হবে বলে আয়োজক কমিটি জানায়।

আয়োজকদের মতে, শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই, গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তুতি বৃদ্ধি এবং বৃত্তির আওতা বিস্তারের লক্ষ্য সামনে রেখে ঊষা বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয় এবং প্রতি বছরই তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

মো. সুমন বিশ্বাসের বক্তব্য (সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ঊষা):

“গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মানসম্মত ও নকলমুক্ত পরীক্ষা আয়োজন করা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ এবং শিক্ষার্থী-বান্ধব রাখতে। বিশেষ করে যেসব শিক্ষক, অভিভাবক ও স্বেচ্ছাসেবক দিনভর সহযোগিতা করেছেন—তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এ পরীক্ষার অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং ভবিষ্যতেও তাদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

Continue Reading

বগুড়া

বগুড়ার শেরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন

Published

on

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১৫ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে এতে ব্যাংকের অবকাঠামোর বা অভ্যন্তরীণ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শুধু মূল ফটকের নামফলক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম।
তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে বাইরে থেকে পেট্রল ঢেলে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকে আগুন দেয়। কর্তব্যরত নৈশপ্রহরী বিষয়টি টের পেয়ে আমাদের জানান। তবে আগুন কিছুক্ষণের মধ্যে নিভে যাওয়ায় তা ব্যাংকের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েনি।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা কেউ দেখেনি। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

Continue Reading

বগুড়া

বিএনপি নেতা বাদশা কে দেখতে শহর জামায়াত নেতৃবৃন্দ

Published

on

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি মো: রেজাউল করিম বাদশা ও দৈনিক বগুড়ার সম্পাদক ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার বিকেলে তাকে দেখতে হাসপাতালে যান বগুড়া শহর জামায়াতের আমীর ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আবিদুর রহমান সোহেল।

এ সময় তার সাথে ছিলেন শহর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আলমগীর হুসাইন, প্রচার সম্পাদক অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন সহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ রেজাউল করিম বাদশার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন ও রোগ মুক্তি কামনা করে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেন। অপরদিকে, রেজাউল করিম বাদশার রোগ মুক্তি কামনা করেছেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দৈনিক সাতমাথা পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন।

S

Continue Reading