ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নারী সহায়তা কর্মীদের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও)। ডব্লিউএইচও’র আফগানিস্তান শাখা দপ্তরের উপপ্রতিনিধি ডা. মুক্তা শর্মা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
রয়টার্সকে ডা. মুক্তা শর্মা বলেন, আফগানিস্তানের হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ৯০ শতাংশই পুরুষ। বাকি যে ১০ শতাংশ নারী আছেন, তাদের অধিকাংশই ধাত্রী এবং নার্স। ফলে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে যেসব নারী ও তরুণী আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যাপারটি পুরোপুরি অনিশ্চতয়তার মধ্যে পড়েছে।
“ভূমিকম্প দুর্গত নারীদের উদ্ধার ও যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড়ে ইস্যু”, বলেন ডা. মুক্তা শর্মা।
গত এক সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কুনারে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প এবং তার পরপরই ৫ দশমিক ২ এবং ৪ দশমিক ৫ মাত্রার দু’টি আফটার শক হয়। মাটির অগভীর অঞ্চলে এই ভূমিকম্প হওয়ায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটে ব্যাপক।
সরকারি হিসেব অনুসারে, ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ হাজার ২০০ জন এবং আহত হয়েছেন ৩ হাজার ১২৪ জন এবং প্রায় ৬ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভূমিকম্পে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। আফগানিস্তানে ইতোমধ্যে উদ্ধার তৎপরতা শুরুও হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে উদ্ধারকর্মীরা শুধুমাত্র পুরুষ ভিকটিমদের উদ্ধার করছেন। নারী এবং দশ বছরের অধিক বয়সী মেয়ে শিশুদের উদ্ধার করা হচ্ছে না।
সরকারিভাবে আহত নারী ও মেয়ে শিশুদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও পুরুষদের তুলনায় উদ্ধার হওয়া নারী ও মেয়েশিশুদের অনুপাত ব্যাপকভাবে কম।
পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সহায়তায় অল্প যে কয়েকজন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হচ্ছে, হাসপাতালে নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকটের কারণে তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভূমিকম্পে আহত নারীদের পাশাপাশি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছেন গর্ভবতী নারীরাও। গর্ভকালীণ সময়ের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না তারা। ডব্লিউএইচও’র হিসেব অনুযায়ী, গত এক সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পের পর থেকে ব্যাপক ঝুঁকিতে আছেন বিধ্বস্ত গ্রামগুলোর প্রায় ১১ হাজার ৬০০ জন নারী।
২০২২ সালে এক সরকারি আদেশে এনজিওতে কর্মরত নারীদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। সেই আদেশে বলা হয়েছিল, জরুরি মানবিক পরিষেবা সংক্রান্ত খাতগুলো এ আদেশের আওতামুক্ত থাকবে।
কিন্তু বাস্তবে তা সম্পূর্ণ মানা হয়নি। অন্যান্য খাতের মতো জরুরি মানবিক পরিষেবা খাতের অনেক নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ডা. মুক্তা শর্মা বলেন, “এখানে বিধিনিষেধের মাত্রা ব্যাপক। আফগানিস্তানে মাহরাম (পুরুষ অভিভাবক) ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকার এই পরিস্থিতিতেও বিধিনিষেধ শিথিল করেনি।”
“আমরা আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। আমরা বলেছি যে এখন এই পরিস্থিতিতে আপনাদের অনেক নারী উদ্ধার ও চিকিৎসাকর্মী দরকার। আফগানিস্তানে যেসব নারী কর্মী আছেন, তাদের আনুন নয়তো আমাদের দায়িত্ব দিন— আমরা অন্যান্য দেশ থেকে নারী কর্মী আনি।”
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে তালেবান সরকারের মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, তবে তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র : রয়টার্স
S