ঐকমত্য কমিশন নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কিছু সুপারিশ দিয়ে কার্যক্রম সমাপ্ত করতে চেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আমরা আশা করছি উপদেষ্টা পরিষদ ও সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করবেন এবং সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে এমন প্রক্রিয়া গ্রহণ করবেন।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের সমালোচনা করতে চাই। কারণ, তারা এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেও বিষয়টি আলোচিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। হঠাৎ করে নির্বাচন সংস্কার কমিশন একটি বিষয় আরোপ করবে, সেটা সঠিক নয়।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করেছে। ঐকমত্য কমিশনকে আমার ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। কারণ, তারা অবশেষে তাদের প্রক্রিয়া বা কার্যক্রম সমাপ্ত করতে পেরেছেন। দ্বিতীয়ত, তারা জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করেছেন। আমার মনে হয়, যেসব প্রস্তাব ওইখানে দেওয়া হয়েছে, সেটায় আপনারা দেখবেন যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ যেটা আমরা স্বাক্ষর করেছি, সেটির বহির্ভূত অনেক আদেশের সংযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে সম্ভবত ৮৪টি দফা; সেখানে বিভিন্ন দফা নিয়ে আমাদের ও বিভিন্ন দলের কিছু ভিন্নমত আছে। এই নোট অব ডিসেন্ট পরিষ্কারভাবে সেখানে উল্লেখ আছে। এসব নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো যারা দিয়েছেন, তারা যদি নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তারা সেটা সেইভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
‘অথচ, বিস্ময়করভাবে আজ যে সংযুক্তিগুলো দেওয়া হয়েছে সুপারিশমালায়, সেখানে এই সংযুক্তির কোনো উল্লেখ নেই। এমনকি গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে তারা দুটো অপশন রেখেই বলেছেন যে এটি আগে বা পরে হতে পারে; সেটা সরকার বিবেচনা করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা হতে পারে।’
নতুন একটি বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংস্কার নামে নতুন একটি আইডিয়া যুক্ত করা হয়েছে। যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের টেবিলে ছিল না। কারণ, আলোচনা হয়নি ঐকমত্য হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন যে নির্বাচনটা হবে, সেটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই সংসদ সদস্যদের যদি সংবিধান সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, সেটা তো জাতীয় সংসদেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় সংসদে কী আলোচিত হবে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ বা আলোচনা না হওয়ার পরেও পরবর্তী জাতীয় সংসদ একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের ভূমিকা রাখবে, এটা তারা আরোপ করতে পারেন না। চাপিয়ে দিতে পারেন না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার কথা। সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য তো কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক যে ম্যান্ডেট; সেটা হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা।
তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ গঠন পদ্ধতির সুপারিশে বলা হয়েছে যে উচ্চকক্ষ (আপার হাউস) নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসনের মধ্যদিয়ে গঠিত হবে। কিন্তু, এই বিষয়ে সবাই ঐক্যমত হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে (উচ্চকক্ষ গঠিত হোক)।
উচ্চকক্ষের এখতিয়ার নিয়ে তিনি বলেন, সুপারিশে বলা হয়েছে, অর্থবিল এবং আস্থা ভোট বাদে সব বিষয় উচ্চকক্ষে উত্থাপন করা হবে। কিন্তু নোট অব ডিসেন্ট আছে যে উচ্চকক্ষ যেহেতু সরাসরি নির্বাচিত নয়, সেই ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনীসহ অন্যান্য বিষয়গুলো তারা বিবেচনা করতে পারেন না। জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কারো নেই।
‘অটোমেটিক সংযুক্তি’ নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি হাস্যকর সুপারিশ হচ্ছে যে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো ২৭০ দিনের মধ্যে গৃহীত না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটোমেটিক) সেটা সংবিধানে সংযুক্ত হবে। সংবিধানের কোনো বিষয় অটো পাসের মতো হতে পারে না, বরং পার্লামেন্টে যথাযথভাবে পাস হয়ে স্পিকার এবং রাষ্ট্রপতির সই হওয়ার পরেই তা আইনে পরিণত হয়।’
তিনি বলেন, আমরা যে গণভোটের প্রস্তাব করেছি, সেটির মধ্য দিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদে’ জনগণ যদি সমর্থন দেয়, সেটা জনগণের সার্বভৌম সম্মতি হবে। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ ও সংসদ সদস্যরা সেটা বাস্তবায়নে বাধ্য। কী রকম? যেভাবে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে সেইভাবে, যেভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেইভাবে। সংযুক্তিতে যেসব আর্টিকেলের সংশোধনে গণভোটের ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে গণভোট লাগবে, আবার কোথাও বলা হয়েছে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ লাগবে না। আমাদের আলোচনা চার-পাঁচ দিন ধরে হয়েছে, কিন্তু যা আলোচনা করা হয়েছিল, তাহা সুপারিশে নেই।
ফেব্রুয়ারিতে কি নির্বাচন হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে না এমন কথা কোনো রাজনৈতিক দল বা নির্বাচন কমিশন বলেনি এবং অবশ্যই নির্বাচন হবে, হতেই হবে। আমরা আশা করছি যথাযথ প্রক্রিয়ায় এবং আইনানুগ সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
S