হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থিত কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা দেশের রপ্তানি খাতে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন– দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ জানিয়ে এলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কার্গো ভিলেজের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় আগুন লাগা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি শুধু দুর্ঘটনা, না কি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে; তা খতিয়ে দেখা জরুরি।’
তিনি জানান, রপ্তানিকারকরা বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে, তাদের মূল্যবান পণ্য খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়, যেগুলোর কোনো নিরাপত্তা নেই। এতে যেমন চুরি বা ক্ষতির ঝুঁকি থাকে, তেমনি অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় বিপদের আশঙ্কাও থাকে।
এই কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করেন তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা, যারা হালকা যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি এবং তৈরি পোশাক ও নমুনা পাঠানোর কাজ করে থাকেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এবং কৃষিপণ্যের রপ্তানির কাজও এই ভিলেজ থেকে পরিচালিত হয়।
গত কয়েক দিনে চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ একাধিক পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে কার্গো ভিলেজে এই আগুন নতুন করে প্রশ্ন তুলছে– এসব কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা?
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের পর আবার ঢাকায় এমন দুর্ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এটি আমাদের উদ্যোক্তাদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। একই সঙ্গে এটি বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে, যা আমাদের রপ্তানি প্রবাহের জন্য হুমকি।’
তিনি আরও জানান, কার্গো ভিলেজে রাখা মালামালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। বিকেএমইএ ইতোমধ্যে তাদের সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করা যায়।
‘আমরা চাই দ্রুত তদন্ত হোক, এবং এই ঘটনার আসল কারণ বেরিয়ে আসুক,’–বলেন হাতেম।
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো রপ্তানিকারক এমন দুর্ঘটনার শিকার না হন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বড় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা একটি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। তবে রপ্তানিকারকরা চাইছেন, এবার যেন বিষয়টি ধামাচাপা না পড়ে যায়।
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজসহ অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত। আমরা সব নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই– নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা যত দ্রুত পারি বিমানবন্দর (এয়ারপোর্ট) চালু করব। কারণ আপনারা জানেন, এয়ারপোর্টে এই মুহূর্তে বিমান ওঠানামা বন্ধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি যে, যত দ্রুত পারি আজ রাতের মধ্যে ফ্লাইট ওপেন করবো।
তিনি বলেন, আমদানি কার্গোতে শুধু দুর্ঘটনা ঘটেছে। রপ্তানি কার্গো আমাদের পরিপূর্ণ আল্লাহর রহমতে নিরাপদ রয়েছে। যখন ইনভেস্টিগেশন করব আপনাদের তথ্য আমলে নেব। আমাদের কাছে জরুরি হচ্ছে এয়ারপোর্ট চালু করা। এয়ারপোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম যত দ্রুত পারা যায় চালু করা। ক্ষতি নিরূপণ করা এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটা কমিটি তৈরি করে তদন্ত করা।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুর আড়াইটায় আগুন লাগে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অবস্থিত অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে, যা প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে।
S