শিল্পী–সাহিত্যিকদের মৃত্যুর পর তাদের স্মরণে নানা আয়োজন হলেও জীবিত অবস্থায় কেন তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না, এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, সরকার ইতোমধ্যে জীবিত কিংবদন্তিদের সম্মাননা ও উদযাপন নিয়ে একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ কথা বলেন।
আহমদ রফিকের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্থাপিত সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন বন্ধুর পোস্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল- কেনো শিল্পী-সাহিত্যিকদের মৃত্যুর পর উদযাপন হয়, জীবদ্দশায় তাদের জন্য কিছু করা হয় না কেনো? এই প্রশ্নটা ভ্যালিড। আমরাও বহুবার ভেবেছি, শিল্প-সাহিত্যের মানুষদের প্রাপ্য মর্যাদা জীবিত অবস্থায় কীভাবে দেওয়া যায়।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আহমদ রফিকের জীবিত অবস্থায়ই আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের বড় পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলাদেশের কিংবদন্তিদের জীবন ও কাজকে উদযাপন করা। এটি স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাবে। শিল্পকলা একাডেমি ইতোমধ্যে এ উদ্যোগের জন্য একটি বার্ষিক ক্যালেন্ডার তৈরি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আয়োজনগুলো যেন নিছক আনুষ্ঠানিক বা বোরিং সরকারি অনুষ্ঠানে পরিণত না হয়, সে বিষয়েও আমরা বিশেষভাবে সতর্ক। সলিমুল্লাহ খান ও ব্রাত্য রাইসুর মতো ভিন্নধর্মী সৃষ্টিশীল মানুষদের উদযাপন একই ধাঁচে করা যায় না। প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব, কাজ ও দর্শন অনুযায়ী অনুষ্ঠান কিউরেশন করা হচ্ছে।’
ক্যালেন্ডার চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা জানান, ‘কয়েকদিন আগে সাবিনা ইয়াসমিন আপাকে নিয়ে আমরা একটি অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেখানে শিল্পী খুরশিদ আলম ভাই বলেছেন, এমন আয়োজন তিনি আগে দেখেননি। আবার আগামী ৮ অক্টোবর উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মদিন উপলক্ষে লালবাগ কেল্লায় ‘ধ্রুপদী সন্ধ্যা’ নামে একটি বিশেষ আয়োজনে আমরা যাচ্ছি। এতে এই প্রজন্মের শিল্পীরাও পারফর্ম করবেন। পাশাপাশি উস্তাদের নাতি সিরাজ খাঁ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসে অংশ নেবেন।’
এই উদ্যোগের তালিকায় জীবিত ও প্রয়াত-সব শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অন্তর্ভুক্ত আছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘আমরা চাই সবাইকে উদযাপন করতে-বদরুদ্দীন উমর, সেলিম আল দীন, রক লিজেন্ড জেমস, তারেক মাসুদ, এস এম সুলতান, নাসির আলী মামুন-সবাই থাকবেন এই উদ্যোগে। আহমদ রফিক ভাইও সেই তালিকায় আছেন। আমরা চেয়েছিলাম, তিনি জীবিত থাকতেই আয়োজনটি করতে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে যখন তাকে দেখতে যাই, দেখি শারীরিক অবস্থা এমন নয় যে তিনি অংশ নিতে পারবেন।’
সংস্কৃতি খাতে নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অল্পদিনের সরকার। সবকিছু একসঙ্গে বদলানো সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা করছি সংস্কৃতি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের। কালচারাল ইনক্লুসিভনেস ও ‘জুলাই ন্যারেটিভ’ নিয়ে আমরা কাজ করছি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে।’
তিনি জানান, শিল্পকলা একাডেমিতে গান ও নাচের স্কুল প্রতিষ্ঠা, নতুন বিভাগ চালু, আন্তর্জাতিক ফিল্ম, থিয়েটার ও মিউজিক ফেস্টিভ্যাল আয়োজন এবং বিয়েনালে পুনরুজ্জীবনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘ইট টেকস টাইম’। আমরা শুরু করে দিচ্ছি, পরবর্তী সরকার এসে একে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
S